বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই কিশোরী আইএসে
অনলাইন ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডট কম
বা্ংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ দুই কিশোরী পূর্ব লন্ডনে নিজেদের বাসা ছেড়ে তুরস্ক গেছে। তারা তুরস্ক হয়ে সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে ব্রিটিশ পুলিশ।
শামীমা বেগম (১৫), খাদিজা সুলতানা (১৬) এবং ১৫ বছর বয়সী আরেক ইথিওপিয়ান কিশোরী তিনজনই বাংলাদেশি-অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির শিক্ষার্থী এবং পরস্পর বন্ধু।
তিন স্কুলছাত্রীর মধ্যে দুজন শামীমা আর খাদিজা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।
পরিবারের অনুরোধে ১৫ বছর বয়সী অপর ইথিওপিয়ান স্কুলছাত্রীর নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। সে ইথিওপিয়ার বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য পুলিশের ধারণা, তুষারপাতের কারণে তুরস্কে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় ওই তিন স্কুলছাত্রী এখনো সিরিয়া পৌঁছাতে পারেনি। তাদের সন্ধান ও ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। গত মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে নিখোঁজ হন এ তিন স্কুলছাত্রী।
বৃহস্পতিবার পুলিশ জানায়, ওই দিন দুপুরে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের একটি ফ্লাইটে তিন স্কুলছাত্রী যুক্তরাজ্য ছাড়ে। তারা তুরস্ক সীমান্ত পার হয়ে সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। সিরিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত। আইএসে যোগ দিতে ইতিমধ্যে অনেক তরুণ-তরুণী এই পথ ব্যবহার করে সিরিয়া গেছে।
গতকাল শনিবার পুলিশ জানায়, গত ডিসেম্বরে বেথনাল গ্রিন অ্যাকাডেমির ১৫ বছর বয়সী অপর এক ছাত্রী আইএসে যোগ দেয়। বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করা ওই ছাত্রীর সঙ্গে এই তিন স্কুলছাত্রীর ভালো বন্ধুত্ব ছিল। ওই ঘটনায় এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। তারা সিরিয়ার অবস্থান করা ছাত্রীর প্ররোচনায় দেশ ছেড়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এর মধ্যে দুজনের পরিবার তাদের ফিরে আসার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছে। খাদিজার পরিবার বলেছে, এ ঘটনায় তারা পুরোপুরি বেদনাকাতর হয়ে পড়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনে বলা হয়, ‘আমরা সবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসি। গত চার দিন দুঃস্বপ্নের মধ্যে কেটেছে।’
শামীমার পরিবার বলেছে, মেয়েকে নিয়ে তারা চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কারণ সিরিয়া একটি ভয়ংকর স্থান। পরিবার চায় না যে শামীমা সেখানে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করুক। এ জন্য তাকে ঘরে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
তিনজনের পরিবার গত বুধবার পুলিশকে তাদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে অবহিত করে। পরিবারগুলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলীর সহায়তাও কামনা করেছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রুশনারা বলেছেন, তাদের উদ্ধারে পুলিশ সম্ভাব্য সবকিছু করছে।
ঝুঁকিপূর্ণ সন্তানদের পাসপোর্ট তালাবদ্ধ করে রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের মুসলমান কমিউনিটির মধ্যে কাজ করা সন্ত্রাসবিরোধী ও নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠনের ইনসপায়ারের পরিচালক সারা খান।
সর্বশেষ এ ঘটনায় দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিপদে পড়ার ভয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রীদের প্রতিবেশীরা এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে পর্যন্ত রাজি হচ্ছেন না। কমিউনিটি নেতারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা কমিউনিটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। মসজিদগুলো সরকারের বাড়তি নজরদারির মধ্যে আসছে। এসব ঘটনা মুসলিমবিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
প্রতিক্ষণ/এডি/রাজু